ভাবুক জীবনশিল্পীদের মনোভুবনে থাকে এক-একটি চিরন্তনী নারীর প্রতিকায়া। তাঁদের সৃষ্টিলোকেও তার অস্তিত্ব থাকে অন্তঃশীলিত প্রেরণার মতো, এই নারী হতে পারে কল্পিত আদর্শের প্রতিরূপ অথবা ব্যক্তিঅভিজ্ঞতার ছায়াশরীর। নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মানস-নারীর একটি বিশিষ্ট মডেল রয়েছে। সে নারীটি রূপবতী, মায়াবী, সংবেদনশীলা, প্রকৃতিমনস্কতায় বিশিষ্ট। তাকে ঘিরে হুমায়ূন আহমেদ গল্প রচনা করেন, কাহিনীর বয়ন ও বয়ানে তার জীবনরূপটিই প্রবলতা পায়। এ ধরনের নারীর দেখা পাই তাঁর নবনী-মৃন্ময়ী-রূপার কাহিনীতে, যাদেরকে বলা যেতে পারে হুমায়ূন আহমেদের মানসকন্যা, যারা মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের তরুণী হয়েও পড়াপড়তা নারী নয়, এক-একজন যেন অন্যভুবনের বাসিন্দা। মূল কাহিনীর সঙ্গে তাদের বিজড়ন শুধু গভীরই নয়, তারাই চালিকাশক্তি। অনেক সময় তাদের দৃষ্টিকোণে ও জবানিতে কাহিনী অর্ন্তবয়িত হয়। নবনী-মৃন্ময়ী-রূপার জীবনকথা একালের রূপকথার মতো পাঠকের হৃদয় কেড়ে নেয়, তাদের জন্যে পাঠক হৃদয় তৈরি হয় উদ্বেল আবেগ ও বাসনা। বাংলা কথাসাহিত্যে এ ধরনের নারীর মডেল শরৎচন্দ্রের পরে হুমায়ূন আহমেদই বেশি করে সৃষ্টি করেছেন। এই তিন কন্যার জীবনগল্প পাঠকের অনুভূতিকে যেমন জারিত করে, পরিস্রুত করে তেমনি লেখকের মানসজগতের প্যাটার্নটিকেও ধরিয়ে দেয়। তিন কন্যা আমাদের স্বপ্নভুবনের eternal she অর্থাৎ চিরন্তনী হয়ে ওঠে।
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম তিনকণ্যা
- লেখক হুমায়ূন আহমেদ
- প্রকাশক অবসর প্রকাশনা সংস্থা
- আইএসবিএন 9789848797646
- প্রকাশের সাল N/A
- মুদ্রণ 1st Published, 2016
- বাঁধাই Hardcover
- পৃষ্ঠা সংখ্যা 316
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
হুমায়ূন আহমেদ
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।